বিসিবি নির্বাচন অনিশ্চয়তায়: ভোটার তালিকা অনুমোদন হয়নি, বিতর্কে নতুন জটিলতা
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৫৩

ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নাটকীয়তা ও অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পরিচালনা পর্ষদের শেষ সভা হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা শুরু হয়নি। বারবার সময় পরিবর্তনের পর সভা শুরু হয় রাত সাড়ে ৯টায় এবং শেষ হয় প্রায় মধ্যরাতে। কিন্তু সভার মূল উদ্দেশ্য- বিসিবি নির্বাচনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকার খসড়া অনুমোদন-তা হয়নি সেদিনও।
তফসিল অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের রিট ও পাল্টা রিট এবং নানা জটিলতায় তা আর সম্ভব হয়নি। ফলে তফসিল ঘোষণার শুরুতেই ভেঙে গেল নিয়ম।
আদালতের জটিলতা
কাউন্সিলর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা দ্বিতীয় দফায় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন কাউন্সিলর হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট সময় বাড়ানোর চিঠি স্থগিত করলেও পরে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত সেই আদেশ স্থগিত করে দেন আগামী রোববার পর্যন্ত। ফলে আইনি জটিলতার মধ্যে আটকে যায় পুরো প্রক্রিয়া।
কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক
বোর্ড সভার পর বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান জানান, আদালতের চূড়ান্ত নির্দেশনা না আসায় তারা ভোটার তালিকা অনুমোদন করেননি। তবে কার কার নাম কখন এসেছে তার নোট রাখা হয়েছে এবং তা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কাউন্সিলরদের নাম জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল সন্ধ্যা ৬টা। কিন্তু রাত ৯টার পরও নাম জমা পড়েছে। এমনকি সদ্য পদ হারানো সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের নামও এসেছে সময়সীমা পার হওয়ার পর।
সভাপতির ক্ষমতা ও হস্তক্ষেপের অভিযোগ
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় কাউন্সিলর মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ান। তবে এ বিষয়ে পরিচালকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তামিম ইকবালসহ কয়েকজন প্রার্থী। অন্যদিকে বিসিবির আইনজীবী মাহিন রহমান দাবি করেন, শনিবারের বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সময় বাড়ানো হয়েছিল।
এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে ক্রিকেট অঙ্গনে ক্ষোভ বাড়ছে। সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল অভিযোগ করেছেন, বিসিবি নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ হচ্ছে এবং আসলে নির্বাচন নয়, ‘সিলেকশন’ চলছে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘সরকার যদি বাড়াবাড়ি করে, বিসিবি ঘেরাও করা হবে।’
এ সময় সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ইসরাফিল খসরুসহ অনেকে সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের ভাইস-চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
নির্বাচনী তফসিল অনিশ্চয়তায়
তফসিল অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণের কথা। কিন্তু তালিকাই এখনো প্রকাশ হয়নি। ইফতেখার রহমান জানিয়েছেন, সময়মতো তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় নির্বাচন সূচি পরিবর্তন হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৬ অক্টোবর বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হওয়ার কথা। একই রাতে সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনেরও সময় নির্ধারিত রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্ন।