ঢাকায় বৃহত্তর সিলেটবাসীর মানববন্ধন : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২০
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা ও চরম জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসী।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অবহেলিত থাকায় এ অঞ্চলের জনগণ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দ্রুত সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনে নামবেন প্রবাসী ও দেশীয় সিলেটবাসী।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বক্তারা বলেন, সিলেট দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ও পর্যটন অঞ্চল হলেও সরকারের অবহেলায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সড়ক, রেল ও আকাশপথের দুরাবস্থা এই অঞ্চলের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “বিগত ১৬ বছরে সিলেটে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। নির্মাণাধীন ছয় লেনের মহাসড়ক এখন সিলেটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ আমলের রেললাইনে আজও কোনো সংস্কার হয়নি, দুর্ঘটনা ঘটছে ঘন ঘন। বিমান ভাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই—কবে এই সড়ক ও রেল উন্নয়ন কাজ শেষ হবে? যদি ১৫ দিনের মধ্যে কোনো অগ্রগতি না দেখা যায়, আমরা কঠোর আন্দোলনে নামব। সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সম্পাদক এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সিলেট বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। আমরা সড়ক উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেও কোনো আশার বাণী পাইনি। দ্রুত সড়ক নির্মাণ ও নতুন ট্রেন চালু না হলে এই আন্দোলন সিলেটজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।”
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান বলেন, “রেলপথে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেসসহ নতুন বগি সংযোজন না করা হলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে সিলেটজুড়ে ট্রেন অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কঠোর আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব নয়।”
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আজ আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি জানাতে হচ্ছে—এটাই সিলেটবাসীর দুর্ভাগ্য। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, অথচ সিলেট পিছিয়ে পড়েছে। সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের উন্নয়ন তালিকায়ও সিলেট নেই। যদি দ্রুত সিলেটের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু না হয়, আমরা প্রবাসী সিলেটিদের সঙ্গে নিয়ে রেমিট্যান্স বন্ধসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম কয়েস সামীর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন এবং সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির (সিবিসাস) সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আবেদ রাজা, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আকরব হোসেন মঞ্জু, নির্বাহী সদস্য তোফায়েল খান, প্রবীণ আইনজীবী তবারক হোসেন, সিবিসাসের সভাপতি আবুল কালাম, জামায়াতে ইসলামী পল্টন শাখার আমির শাহীন আহমদ খান, সিলেট বিভাগ যোগাযোগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন সোহেল, রেল সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আজিজুল ইসলাম, আতিকুর রহমান আখই, সংগঠক আবু বক্কর সিদ্দিক ও সুজন মিয়া।
বক্তারা একমত হন যে, সিলেটের প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও উন্নয়ন বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তারা ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে।
