
ছবি- গুগল
পৃথিবীর মতোই অনেক অনুরূপ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও মঙ্গল গ্রহে কেন প্রাণের বিকাশ হয়নি, যেখানে পৃথিবীতে তা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে? নাসার একটি সাম্প্রতিক অনুসন্ধান এই জটিল প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য উত্তর সামনে এনেছে।
নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এক সময় মঙ্গলে নদী ও হ্রদ প্রবাহিত হলেও, তা ছিল খুবই অল্প সময়ের জন্য। এরপর পুরো গ্রহটি এক বিশাল মরুভূমিতে পরিণত হয়, যেখানে প্রাণ টিকে থাকার মতো পরিবেশ দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয়নি।
মঙ্গল গ্রহে প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী অনেক উপাদান থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তরল পানি- সম্ভবত দীর্ঘ সময় স্থায়ী ছিল না। যদিও মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠে প্রাচীন নদী ও হ্রদের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তবুও সেটি খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ছিল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২৫ সালের শুরুতে নাসার ‘কিউরিওসিটি’ রোভার এমন কিছু শিলা আবিষ্কার করে যাতে কার্বনেট খনিজের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবীতে এ ধরনের খনিজ, যেমন লাইমস্টোন, বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং তা শিলায় আটকে রাখে।
সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, এই কার্বনেট শিলা কীভাবে মঙ্গলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর গতিপথ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী এডউইন কাইট বলেন, মঙ্গলে কিছু নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে অল্প সময়ের জন্য প্রাণবান পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এই ‘ওয়াসিস’-গুলো ছিল ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়।
পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইড আবহাওয়া উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং এটি আবার আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, ফলে দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু মঙ্গলে এই আগ্নেয়গিরির গ্যাস নিঃসরণ ছিল অনেক কম, যার ফলে এমন চক্র সেখানে টেকেনি।
মডেল অনুযায়ী, তরল পানির অল্প সময়ের উপস্থিতির পর প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে মঙ্গল মরুভূমিতে রূপ নেয়। প্রাণ সৃষ্টির জন্য এটি ছিল অত্যন্ত দীর্ঘ ও প্রতিকূল সময়।
কাইট আরও বলেন, 'এখনও মঙ্গলের গভীরে তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে, যা আমরা এখনো আবিষ্কার করিনি।'
২০২১ সালে নাসার ‘পারসিভিয়ারেন্স’ রোভার মঙ্গলের একটি প্রাচীন নদী ডেল্টায় অবতরণ করে এবং সেখানে কার্বনেটের চিহ্ন খুঁজে পায়। বিজ্ঞানীরা এখন আরো বেশি কার্বনেট সংগ্রহ করতে চান। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মঙ্গলের শিলা পৃথিবীতে এনে বিশ্লেষণ করা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই লক্ষ্যে আগামী এক দশকের মধ্যে মিশন পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই অনুসন্ধানের মূল প্রশ্ন রয়ে যায়- পৃথিবীর মতো প্রাণধারণকারী গ্রহ কি বিরল?
১৯৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতের বাইরের প্রায় ৬ হাজার গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। তবে কেবল পৃথিবী ও মঙ্গলেই এমন শিলা পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে তাদের অতীত পরিবেশ বোঝা সম্ভব।
এডউইন কাইট বলেন, 'যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে মঙ্গলের পানিপূর্ণ যুগেও কোনো প্রাণের বিকাশ ঘটেনি, তাহলে ধরে নিতে হবে- মহাবিশ্বে প্রাণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটা আসলে অনেক কঠিন। আর যদি প্রাচীন কোনো প্রাণের চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহলে তা হবে পরিষ্কার বার্তা: গ্রহ পর্যায়ে প্রাণ সৃষ্টি সম্ভবত অনেক সহজ।