শিরোনাম
মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি নির্বাচন যত দেরি হবে, বাংলাদেশ ততই পেছাবে: সিলেটে মির্জা ফখরুল আলবদর রাজাকারবাহিনী একেক সময় একেক কথা বলছে: হাসান মাহমুদ টুকু বেগম জিয়া‌কে স্লো পয়জ‌নিং ক‌রে হ.ত্যা কর‌তেই গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছিল আওয়ামী লীগ: মির্জা আব্বাস জেলা ও মহানগর বিএনপির মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন; আশাবাদ মির্জা ফখরু‌লের বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে পৌঁছেছেন পরিবহন ধর্মঘটে ভাঙ্গন: মঙ্গলবার জামায়াতপন্থী মালিকদের গা‌ড়ি চল‌বে জাফলং এর অবৈধ বালু আটক করলেন গ্রামবাসী, ছাড়ালেন প্রশাসন! ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট গড়ালো ৭২ ঘন্টায়

https://www.emjanews.com/

6980

surplus

প্রকাশিত

০৬ জুলাই ২০২৫ ২৩:১৮

অন্যান্য

সাপকে পোষ মানাতে গিয়ে জীবনটাই দিয়ে দিল শাকিল

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ ২৩:১৮

ছবি এআই জেনারেটেড

বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিলাসী' গল্পে আমরা দেখি এক হৃদয়বিদারক কাহিনি, কুসংস্কার, গ্রামীণ সরলতা ও অন্ধ বিশ্বাসের ফাঁদে নির্মম মৃত্যু। অথচ সেই শতবর্ষ পুরোনো গল্প আজও জীবন্ত বাস্তব হয়ে ফিরে আসে আমাদের সমাজে, আমাদের চারপাশে। ঠিক যেমন ভোলার মনপুরায় ঘটে যাওয়া তরুণ মো. শাকিল ওরফে মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতি!

তাঁর বয়স মাত্র ২৫। সামনে ছিল পুরো জীবন। স্বপ্ন ছিল, ছিল সাহসও। কিন্তু সেই সাহস আজ যেন মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাকিল নামের এক তরুণ খেলার ছলে হাতে নিয়েছিলেন মৃত্যু। এক বিষধর সাপকে ‘পোষ মানাতে’ চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির ভয়ঙ্কর সত্তা কখনও কারও আজ্ঞাবহ হয় না। তাই তো সেদিন, সবার চোখের সামনে, সাপ ছোবল মেরে ছিনিয়ে নিলো এক তরুণ প্রাণ।

ঘটনাটি ঘটেছে ভোলার মনপুরা উপজেলার মেঘনাপাড়ে, গত শনিবার বিকেলে। নিহত মো. শাকিল দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খোকন মাঝির ছেলে।
প্রায় ১৫ দিন আগে স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়ি থেকে এক বিষধর গোখরা সাপ ধরে এনেছিলেন শাকিল। উদ্দেশ্য ছিল, তাকে পোষ মানানো। প্রতিদিন সাপটিকে হাঁড়ির মধ্যে রেখে খাবার দিতেন, কথা বলতেন, গান গাইতেন। পাশে লাঠি থাকতো, মুখে সুর। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলছেন, ‘উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে যাবি না, আকাশে-পাতালে কোত্থাও যাবি না।’ তারপর আবার মজা করে বলে ওঠেন, ‘শঙ্খমালা, তোর দেহ কালা’। সাপকে নিয়ে যেন এক ধরণের খেলার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন তিনি।

মা-বাবা নিষেধ করতেন, কিন্তু শাকিল যেন বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন এক অন্যরকম জগতে। শেষবারের মতো সাপটিকে নিয়ে তিনি বের হন শনিবার বিকেলে বেড়িবাঁধ এলাকায়। উৎসুক জনতার ভিড়। শাকিল নিজের হাতে সাপের মাথার কাছে লাঠি ঘোরাচ্ছিলেন। মুহূর্তেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সাপটি তাঁর পায়ের ঊরুতে ছোবল মারে। ভয়কে জয় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চিরচেনা ছন্দে ছুটে আসে বিষ। তখনি তিনি সাপে কামড়ানো জায়গা মুখ দিয়ে চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করেন। পরে সাপটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর শরীর অসাড় হতে শুরু করে।

পরিবারের সদস্যরা দ্রুত এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা কিছুক্ষণ ঝাড়ফুঁক করেন, ‘বিষ নামান’। তখন শাকিলের পায়ের বাঁধনও খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বিষ তখন শরীরের গভীরে ছড়িয়ে গেছে।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেই  রবিবার (৬ জুলাই) ভোররাত চারটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই তরুণ।
শাকিলের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে থাকা কুসংস্কার, অলীক বিশ্বাস ও সাহসের ভুল ব্যাখ্যার একটি মর্মান্তিক উদাহরণ।
মনপুরা থানার ওসি আহসান কবীর জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
শাকিলের বাড়িতে এখন শুধু হাহাকার। মায়ের কাঁধে মাথা রেখে কখনো যে ছেলে গান গাইত, আজ সেই ছেলে কফিনে শুয়ে নীরব। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।