শিরোনাম
সিলেট ২ আসন/বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যক্তি নয় ধানের শীষের পতাকাতলেই  আছে ,থাকবে : লুনা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘনায় ৩ জন নিহত: আহত ২৫ জরুরী তলবে আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় মাঝরাতে বিএনপির চার নেতা বহিস্কার বিএনপিও যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে দিল সিলেট -৩ আসনের টিকেট নির্বাচনে এনসিপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা সিলেট বিভাগে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ৩ প্রবাসী মৌলভীবাজার-১ মিঠু, মৌলভীবাজার-২ সকু, মৌলভীবাজার-৩ নাসের এবং মৌলভীবাজার-৪ আসনে মজিবর বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন হবিগঞ্জ-২ জীবন, হবিগঞ্জ-৩ গউছ এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনে ফয়সাল বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন সুনামগঞ্জ-১ আনিসুল, সুনামগঞ্জ-৩ কয়ছর এবং সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মিলন বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন

https://www.emjanews.com/

10661

surplus

প্রকাশিত

১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:১৯

আপডেট

১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩২

অন্যান্য

‘সিলেট আল হারামাইন হাসপাতালে যত প্রতারণা, অব্যবস্থাপনা’

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:১৯

ছবি: সংগৃহীত।

সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকিগুলোতে অপচিকিৎসা, অব্যবস্থাপনা ও অসহায় মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করা এখন নিয়মিত চিত্র। রহস্যজনক কারণে এর বিহিতে কেউ কথা বলেন না। রোগি ও স্বজনদের সাথে চিকিৎসকদের অনান্তরিক আচরণের সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরাও সবসময় মারমুখি। ভুল চিকিৎসায় এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অবহেলায় সিলেটে প্রায়ই রোগি মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে ওঠে আসে। তবে কোনো ঘটনাতেই আর সঠিক কোনো তদন্ত হয় না। উল্টো কোনো কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করা রোগির স্বজনকে হাসপাতাল-ক্লিনিক সিন্ডিকেট মিলে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। মৃতের স্বজনকে হাসপাতালের মধ্যে মারধর করার নজিরও আছে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে।

সম্প্রতি শ্বশুরের জরুরি চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর বহুল আলোচিত আল হারামাইন হাসপাতালে গিয়ে এমনই ভয়াবহ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ‘এখন’ টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো চিফ গোলজার আহমদ। তার স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। তবে ন্যুনতম মানবিক সহায়তাও পাননি তিনি।

এ ঘটনার মানসিক ট্রমার মধ্যেই গোলজার আহমদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্টেটাস দিয়েছেন। তার স্টেটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো :

‘আলহারামাইন হাসপাতালের বাহির-ভেতরে বাজে অভিজ্ঞতায় হাসপাতাল ত্যাগ (লেখাটা একটু বড় হলেও আশা রাখি সবাই পড়বেন) 

সিলেটের আল হারামাইন হাসপাতাল শহরের অন্যতম বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাসপাতালটি অত্যাধুনিক সাজসজ্জা, ঝকঝকে ভবন আর বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় ‘আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা’দেওয়ার দাবি করে। তবে বাস্তবে রোগীদের অভিজ্ঞতা এর সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র । হাসপাতালটির বাহিরের চাকচিক্যর মাঝে ভেতরের অব্যবস্থা যেন সদরঘাটের মতো বিশৃঙ্খল, ডাক্তার, নার্স ও কর্মীদের অদক্ষতা, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, এবং রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।  

মোটামোটি রোগ ও ব্যবস্থাপনা সম্পকির্ত সম্যক জানা আমার সাথে যদি এরকম ঘটনা ঘটে তাহলে যারা একবারেই এ বিষয়ে ধারণা রাখেন না তাদের সাথে কি ঘটে তা অনেকটা অনুমেয়। 

আমার শ্বশুর বেশ কয়েকদিন থেকে শারিরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ । বিশেষ করে শরীরে আয়রন সংকট, কোনভাবেই আয়রন কারেকশন না হওয়ায় একজন হেমাটোলোজিস্টকে দেখাতে হয়। বাসার কাছাকাছি ও যাতায়াত সুবিধা থাকায় আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেই । বলে রাখি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে আমি ও আমার পরিবারের অনেকেই আলহারামাইনের চেম্বার চিকিৎসকদের সেবা নিয়ে থাকি বিধায় একটা বিশ্বাস ছিলো যে ভালো চিকিৎসা পাবো । 
সেই ভাবনা অনুসারে আল হারামাইন হাসপাতালের হেমাটোলোজিস্ট ডা. আবু ইউসুফ মোঃ নাজিমের শরনাপন্ন হই সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ। তিনি রোগী দেখে কিছু টেস্ট দেন – বলেন পরের দিন দেখানোর জন্য । ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক আমরা সব টেস্ট করিয়ে পরের দিন উনার দেয়া সময় মতো রিপোর্ট দেখাতে হাজির হই চেম্বারে । বিকেল ৫টা ৪৫ হাজির হলেও উনার এটেনডেন্ট বলে অপেক্ষা করতে । সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর  এটেন্ডকে আবার জিজ্ঞেস করলে জানায় স্যার আজ চেম্বার ছেড়ে চলে গেছেন আপনারা পরে আসুন । পরে মানে আর দুর্গাপুজাঁর ছুটির পরে । ভাবলাম একটা মানুষের তাড়া থাকতেই পারে । তাই বাধ্য হয়ে অপেক্ষায় থাকলাম । এদিকে এই কয়েকদিনে আমার শশুরের আরো শরীর খারাপ হতে থাকে পুঁজার ছুটি শেষে  তাদের নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৭ অক্টোবর  আবার আমার স্ত্রী গেলেন  রিপোর্ট দেখাতে । ডাক্তারের এটেনডেন্ট বললেন বসতে - স্যার রোগী দেখছে পরে রিপোর্ট দেখবে। আমার স্ত্রী  তার অসুস্থ বাবাকে সাথে নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো বসে থাকার পর আবার তার এটেনডেন্টকে জিজ্ঞেস করলে বলে স্যার চলে গেছেন আজকে আর দেখবেন না আপনি পরের দিন আসুন । আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে কষ্ট পান । আমাকে ফোনে বিষয়টি বলেন । হারামাইনের কারো নাম্বার আমার সংগ্রহে না থাকায় আমি সাথে সাথে তখন আমার সহকর্মী সন্দীপন শুভ এবং সিলেটের সিনিয়র  সাংবাদিক  মইনুদ্দিন মঞ্জু ভাইকে বিষয়টি বলি যে হাসপাতালে পরিচিত কারো নাম্বার দিতে । 

অপেক্ষা করে যখন নাম্বার পাচ্ছিলাম না তখন তাদের হেল্প লাইনে কল দিয়ে আমার বিষয়টা অবহিত করি । তখন উনারা পরামর্শ দেয় যে তাদের অফিসে গিয়ে একটা লিখিত দিতে । শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় – মনে হচ্ছে আমি কোন অপরাধ করেছি সেটার লিখিত দিয়ে তাদের কাছে গিয়ে মাফ চাই । কঠিন করে বলায় উনারা বললো স্যার বিষয়টা আমরা দেখছি । ততক্ষনে শুভ  হারামাইনের মার্কেটিং হেড পারভেজের নাম্বার দেন । আমি সুন্দর করে উনাকে বিষয়টি অবগত করি । তারপর আমি হাসপাতালে যাই – শশুড় বেশি অসুস্থ থাকায় এই দিনই  হাসপাতালের আরেকজন কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট ড. সোহাইল আলমকে (এসিসট্যান্ট প্রফেসর) দেখাই । উনিও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। তারপর টেস্ট করিয়ে বাসায় চলে যাই। ঘন্টা সময় পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পারভেজ তিনি আমাকে জানান পরের দিন অর্থ্যাৎ ৮ তারিখ আমি যেন রিপোর্ট নিয়ে যাই। শুধু মাত্র আমার রিপোর্টটি দেখার জন্য হেমাটোলোজিস্ট ড. আবু ইউসুফ মোঃ নাজিম আসবেন । তার এমন আশ্বাসে খুশি হলাম। 

পরের দিন রিপোর্ট দেখাতে গেলে রিসিপশন থেকে আমার কাছে পুনরায় রিপোর্ট দেখানোর জন্য নতুন করে ড. ফি দাবি করা হয়। আমি ঝাড়ি দিয়ে কথা বলায় আমার কাছ থেকে আর টাকা চায়নি । ড. ইউসুফ রিপোর্ট দেখে বললেন তার তেমন কোন সমস্যা নেই রক্ত কম থাকায় ১টি আয়রন ইনজেকসন দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি । প্রয়োজনে পরামর্শের জন্য মোবাইল নাম্বারটি চাইলে সরাসরি বলেন মোবাইল নাম্বার দেয়া যাবে না । তারপর আমি তার চেম্বার থেকে বের হয়ে যাই । 

ঐদিন আবার কার্ডিওলজিস্ট ড. সোহাইলের তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বলেন তার কার্ডিয়াক কোন সমস্যা নেই তবে বুকে ও পেটে পানির অস্থিত আছে কিন্তু তিনি শুধু এন্টিবায়োটিক দিয়ে  চিকিৎসাপত্র শেষ করেন। আর বলেন আয়রন দিয়ে দিলেই সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আরেকটি এন্টোবায়োটিক যুক্ত করে দেন। 

তাদের পরামর্শ অনুসারে ৯ অক্টোবর সিলেট ওমেন্স মেডিকেলে গিয়ে আয়রন ইনজেকশন পুশ করা হয়। কিন্তু তার পরের দিন থেকে আমার শশুড়ের শরীর আরো অবনতি হতে থাকে ।

বাধ্য হয়ে ১১ তারিখ সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে নিয়ে যাই হারামাইন হসপিটালের কার্ডিওলজিস্ট ড. সোহাইল আলমের কাছে । শশুড়ের শ্বাস কষ্ট বেশি থাকায় রোগীর কন্ডিশন অনুসারে ভর্তি দেন সিসিইউতে। রোগির সামনেই ডাক্তার খারাপ কন্ডিশন বলায় আমার শশুড় ভয় পেয়ে যান মারাত্মক ভাবে, তিনি বসে থাকতে পারছিলেন না এবং কাঁপছিলেন যা দেখে আমি আমার স্ত্রী উভয় ই ভয় পেয়ে যাই । ঐদিন চৌহাট্টায় সড়ক সংস্কার আন্দোলন চলছিলো তাই নাইওরপুল পয়েন্ট জিন্দাবাজার সহ নয়াসড়কে ভয়াভহ যানযট থাকায় আর রোগীর অবস্থা দেখে আমি আর আমার স্ত্রী ইনস্টেন্ট সিদ্ধান্ত নেই হারামাইনে ভর্তি করবো । সেই অনুসারে ঐ দিন সন্ধ্যে ৭টায় সিসিউতে ভর্তি করি আমি। 
তারপর রাত ১১টার পরে ডা. সোহাইল আলম রোগী দেখেন এবং কেয়ারিইউনিটকে পরামর্শ দেন একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে কল করার । সাথে সাথে হাসপাতালের কেয়ার ইউনিট থেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহেদ আহমদ কে কলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উনারা উত্তর দেয় তাকে জানানো হয়েছে তবে কখন আসবেন তা তারা নিশ্চিত করতে পারেননি । এদিকে আমরা ঐ সময় কেয়ার ইউনিটে উপস্থিত থাকায় আর বাবার অবস্থা সুচনীয় হওয়ায়  ডাঃ শাহেদ আহমদ এর চেম্বারে আমরা সরাসরি চলে যাই । উল্লেখ্য ডাঃ শাহেদ সরাসরি আমার স্ত্রীর শিক্ষক, তাই তার শরনাপন্ন হওয়া । 

চেম্বারে যাওয়ার পর  ডাঃ শাহেদ আমার স্ত্রীকে আশ্বাস দিলেন আসবেন । তিনি আসলেন রাত ১২টার একটু পরে। রোগী দেখে সোডিয়াম কম থাকার কথা জানিয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বলেন তার চিকিৎসা দিতে। সাথে কিছু ডায়াগোনেসিস দিয়ে গেলেন আর তাদের বললেন যেন আপডেট দেয়। পরে সারা রাত কেয়ার ইউনিটের সামনেই থাকি আমরা । যেহেতু আমার স্ত্রী নিজে একজন চিকিৎসক আমি এতদিনে দেখেছি যে কোন হাসপাতালে আমার স্ত্রীর এক্সেস থাকে । কিন্তু হারামাইন ব্যতিক্রম । নির্দিষ্টি ভিজিট আওয়ার ছাড়া কাউকেই এলাও করেন না তারা । সিকিউরিটি গার্ডদের বেয়াদবী আর ভাষাগত ব্যবহারে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মার্কেটিং হেড পারভেজকে  রিকুয়েস্ট করে বলি যে আমার স্ত্রীর একক্সেস যেন থাকে । কিন্তু আশানুরুপ সহযোগীতা টুকু পাইনি । 

তার পরের দিন সকাল বেলা ভিজিট আওয়ারে আমার স্ত্রী এবং আমার খালা শশুর ডাঃ আজাদ এক সাথে কেয়ার ইউনিটে প্রবেশ করে দেখেন শশুড়ের অবস্থা আরো খারাপ । উনার শরীর ফুলে গেছে -শ্বাস নিতে পারছেন না ,পশ্রাবও বন্ধ – কথা আটকে যাচ্ছে সহ নানান জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । তখন উনারা ২ জন কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করেন কেন ডাঃ শাহেদ যে মেডিসিন ব্যবহারের কথা বলেনছেন তা ব্যবহার করা হচ্ছে না।  তখন তারা বলে কনসালটেন্ট এর পরামর্শ ছাড়া তারা তা করতে পারবেন না । কিন্তু কনসালটেন্ট আসবেন রাত ১১টার পরে । এভাবে কেটে যায় পুরোটা দিন । পরে রাতে ডাঃ সোহাইল আলম এসে রোগী দেখে আমাদেরকে জানান উনার লাংসে পানি রয়েছে । তাই তিনি হাসপাতালের রেসপায়রেটোরি/চেষ্ট মেডিসিন  ডাঃ রুহুল আমিন খান রিজভীর কথা বলেন । আর আমাদেরকে বলেন উনিই এখন বাকি চিকিৎসা করবেন । ডাঃ সোহাইলের আর কোন চিকিৎসা নেই বলে স্পষ্ট করেন তিনি । ততক্ষনে ১২ অক্টোবর রাত ১২টা পার হয়েছে । ডাঃ রিজভি ঐ হাসপাতালের  আইসিইউ কনসালটেন্ট হলেও তিনি আমাদের রোগী দেখবেন ১৩ তারিখ বিকেলে এটাই জানানো হয় ।

রাতে ভিজিটের সময় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহেদের রির্পোট উনাকে দেখানো হয়েছে কি না এমনটি জিজ্ঞেস করলে দায়িত্বরতরা জানায় দেখানো হয়নি। পরে আমার স্ত্রী ঐ রিপোর্টের ছবি নিয়ে নিচতলায় তার চেম্বারে যান । এটেনডেন্টকে পরিচয় দেন যে তিনি নিজেও একজন ডাক্তার পাশাপাশি শাহেদ স্যার তার সরাসরি শিক্ষক । কিন্তু  ঐ এটেনডেন্ট ডাঃ শাহেদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়নি । পরে আমার স্ত্রী নিজে ডাঃ শাহেদ স্যারকে কল দিলে তিনি কোন রেসপন্স করেন নি । এমনকি মোবাইলে ওয়াটসএপে রিপোর্ট পাঠালেও সিন করে আর কোন রিপ্লাইও দেননি ।  

পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৩ অক্টোবর সোমবার সারা দিন আমার খালা শশুড় ও আমার স্ত্রী বারবার দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত আপডেট চাইলেও কোন আপডেট দেয়নি তারা। বাধ্য হয়ে আমার শশুড়ের চিকিৎসা পত্র দেখলে তারাও চিন্তিত হয়ে পড়েন । ততক্ষনে আমার শশুড়ের শারিরিক অবস্থা আরো দুর্বোল হয় । তখন আমার স্ত্রী ও খালা শশুড় দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অক্সিজেন ফ্লো বাড়ানোর কথা বললেও তারা কর্ণপাত করে নি। এভাবে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে যায় । অথচ সন্ধ্যায় ভিজিট আওয়ারে আমার স্ত্রী যখন কেয়ার ইউনিটে প্রবেশ করেন তখন দায়িত্বরদের জিজ্ঞেস করেন ডাঃ রিজভী কখন তারা বাবাকে দেখবেন । আইএমও  ও নার্সরা বলে স্যার আসলেই দেখবেন। অথচ ঐ সময় ডাঃ রিজভী কেয়ার ইউনিটের দায়িত্বরত অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে তিনি হাসি গল্পে অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন । কিন্তু  ডাঃ রিজভেীকে আমার স্ত্রী না চেনায় ঐ সময় আর কোন কথা বলেন নি তিনি । 
পরে রাত ১০টায় যার তত্বাবধানে আমার শশুড় ভর্তি হয়েছিলেন সেই ডাঃ সোহাইল আল কাছে গিয়ে আমার স্ত্রী ও খালা শশুড় অভিযোগ করেন ১২ তারিখ রাতে আপনি ডাঃ রিজভীকে সাজেস্ট করার পর আজ পুরো দিন চলে গেলো রাতও যাচ্ছে এখনো তিনি আমার রোগীকে দেখেন নি । বলার পর তাদের সামনেই ডাঃ সোহাইল, ডাঃ রিজভীকে মোবাইলে কল দিয়ে অনুরোধ করেন রোগী দেখার। ডাঃ রিজভী তখন আশ্বাস দেন দেখতেছেন । 
এরপর রাত ১১টায় ডাঃ রিজভী রোগী দেখে আমি ও আমার স্ত্রীকে ডাকালেন তিনি, আমার স্ত্রী ডাঃ রিজভী দেখে আমাকে বলেন উনি তো রাত ৮টায়ও সিসিইউ ইউনিটে ছিলো , তাহলে বাবাকে দেখলো না কেন, তখন আমি আমার স্ত্রীকে বলি বিষয়টি এখন আলাপের সময় নয় –পরে ভাববো  ।

এর পর ডাঃ রিজভী  বললেন উনার লাঙসে এত জটিলতা আছে তা এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব না। কারন তাদের সাসপেকশন হলো লাংসের ক্যান্সার হতে পারে এমনকি টিস্যু অপসারণও প্রয়োজন হতে পারে ।  তাই লাংসের পানি বের করা গেলেও ক্যান্সার সনাক্তকরনের কোন টেস্ট সিলেটের কোথায় নেই প্রয়োজন মতো লাংসের টিস্যু কাটার দরকার হলে সেই যন্ত্রপাতি নাই পাশাপাশি সিলেটে দক্ষ চিকিৎসকও নাই- এটা স্পষ্ট করে তিনি  রেফারেল করলেন ঢাকার স্কয়ার কিংবা সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । সম্ভবত মানবিক ডাক্তার তাই স্কয়ারে টাকা বেশি লাগবে বলে  আনুপাতিক কমখরচে চিকিৎসা করতে হলে আমাদেরকে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার পরামর্শ  দিলেন তিনি। 

তখন আমার শশুড়ের অবস্থা আরো খারাপ, কথা বলতে পারছেনা, মুখ লেগে গেছে, প্রস্রাব বন্ধ, শরীর সহ হাত পা ফুলে গেছে- অক্সিজেন সেচুরেশন কম থাকায় ৫_৬ লিটার যাওযার পরেও স্বাভাবিক ছিলেন না । তারপর আমার স্ত্রী দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন আপাতত ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন না দিয়ে, হেড মাস্কে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া যায় কি না। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা কর্ণপাত করেননি । এমন সব কর্মকান্ডে আর আমাদের চাপে হারামাইনের চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন আমাদেরকে ডিল করা তাদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে । তাই তারা চাচ্ছিলেন আমরা যেন সেখান থেকে লিভ নেই ।

এদিকে ডাঃ রিজভীর এমন পরামর্শে আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। কি করবো না করবো এমন এটা বুঝে ওঠতে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগি । আমার স্ত্রী তখন মোবাইলে কল দেন সিলেট পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাপাতালের রেসপায়রোটোরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ শেখ এইচএম মেসবাহুল ইসলাম স্যারকে । স্যার সাথে সাথে  ফোন রিসিভ করে আমার স্ত্রীর কথা শুনে আমাদেরকে বলেন  মাউন্ট এডোরা আখালিয়াতে যেতে । তিনি সেখানে চেস্বার করছেন বললেন প্যাসেন্ট সামারি নিয়ে যাওয়ার জন্য ।

আমার স্ত্রী পাগলের মতো হাসপাতাল থেকে নেমে দৌড় দেন আমিও সাথে সাথে । এ সময় নামতে গিয়ে হারামাইন হসপিটালের সামনে হুচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে কিছুটা জখম হোন । আমি অসহায় হয়ে শুধু দেখলাম তারপরও তিনি গাড়িতে না গিয়ে আমাকে বললেন মোটর সাইকেলে যাতে দ্রুত স্যারের কাছে যাই । রওয়ানা দিলাম – স্যারের কাছে পৌঁছালাম রাত সাড়ে ১২টায় । ততক্ষনে বারবার আমার স্ত্রী স্যারকে কল দিয়ে আপডেট জানাচ্ছেন যে আমরা আসতেছি স্যার। চেম্বারে গিয়ে দেখলাম তখনো স্যারের চেম্বারে ১০/১২ জন রোগী অপেক্ষমান । এত রোগী অপেক্ষমান থাকার পরও স্যার আমাদেরকে চেম্বারে ডেকে নিলেন । প্রায় ৩০ মিনিটের মতো আমার শশুড়ের সার্বিক অবস্থা নিয়ে তিনি অবজার্ভেশন করে আমাদেরকে পাঠালেন সিলেটের আরেক খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট স্পেশালিষ্ট ও পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের ডিপার্টমেন্ট হেড প্রফেসর ডাঃ শাহাব উদ্দিন স্যারের কাছে । স্যারও তখন চেম্বারে রোগী দেখায় ব্যস্ত – তখন রাত দেড়টা প্রায় । স্যারের চেম্বারেও রোগী অপেক্ষমান ২০ এর নিচে নয় । কিন্তু সাথে সাথে আমাদেরকে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিলেন এবং স্যার আন্তরিকভাবে সব রিপোর্ট দেখে আবার আমাদেরকে বললেন মেসবাহুল স্যারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত । 

আবারো আমরা মেসবাহুল স্যারের চেম্বারে প্রবেশ করি । স্যার তখন আমার স্ত্রীকে বললেন আপনি সাহস করে আপনার বাবাকে এখানে নিয়ে আসেন । আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা আপনার বাবাকে দেখি কি করা যায়। সাথে এটাও বললেন সিলেটের আরেক খ্যাতিমান মেডিসিন ও কার্ডিওলজিষ্ট স্পেশালিষ্ট ও পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডাঃ শিশির বসাক স্যারকে সাথে নিয়ে তারা চিকিৎসা দেবেন । যদি না পারেন বা ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজনও যদি হয় সেক্ষেত্রে তিনি রেফার করে তার পরিচিত স্যারদের কাছে পাঠাবেন।
উক্ত সময়ে সিলেটের এই খ্যাতিমান চিকিৎসক যে সার্বিক সহযোগিতা ও মানসিক শক্তির যোগান দিলেন তাতে আমার স্ত্রী কিছুটা স্বস্থি অনুভব করেন। পরে রাত ৩ টায় আমরা বাসায় যাই । গত ৩ রাত আমি ও আমার স্ত্রী ১ ঘন্টার জন্যও ঘুমাইনি । বাসায় গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম না ঢাকায় নেবো । তাহলে ব্যবস্থা কি – আইসিউ এম্বু্লেন্সে নিতে হবে । কিন্তু আমার শশুড়ের শারিরিক কন্ডিশন আর সিলেট টু ঢাকার যে রাস্তা- তাতে রিস্ক হতে পারে বেশি বললেন খালা শশুড় ডাঃ আজাদ। 

রাত ৪টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত আমার স্ত্রী তার অন্যান্য সহকর্মী, সিনিয়র চিকিৎসকদের সাথে মোবাইলে শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন আপাতত মাউন্ড এডোরা আখালিতেই ভর্তি করাবো আমরা । সকাল ৭টায় আল হারামাইন হাসপাতালের কেয়ার ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসককে আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত জানান যে আমরা আমাদের রোগিকে নিয়ে যাবো । আপনারা ডিসচার্জের ব্যবস্থা করেন । 

এদিকে ততক্ষনে আমি চলে যাই আলহারামাইনে । গিয়ে তাদেরকে বলি আমাদের রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেবো আইসিইউ এম্বুলেন্স আপনাদের আছে কি না ? উনারা বলে সব আছে আপনার বিল পে করুন আমরা দিয়ে দিচ্ছি । এর মধ্যে বিল পে করার জন্য হাসপাতাল থেকে আমার শাশুড়িকে বার বার কল দিচ্ছে । অথচ বিল পের জন্য আমি হাসপাতালে আছি । আমার শাশুড়ি বাধ্য হয়ে তাদেরকে বললেন আমার ছেলে ওখানে আছে আপনারা টেনশন নিবেন না । টাকা দিয়েই আমরা আমাদের রোগিকে নেবো। 

১৪ অক্টোবর সকাল থেকে আমি হাসপাতালে থাকলেও বিল পে করিনি কারন মাউন্ড এডোরাতে তখন সিসিইউ, এইচডিইউ কিংবা আইসিইউ বেড খালি ছিলো না । এখন ডিসচার্জ নিলে এম্বুলেন্সে রাখা ছাড়া আমার কোন গতি নেই । তাই বাধ্য হয়েই আমি একটু দেরি করছি । 

আমি সকাল সাড়ে ১০টায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের মার্কেটিং এর শফিক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে কেয়ার ইউনিটে একটা বেডের আব্দার করি । সকাল ১১ টায় ম্যানেজার বিজনেস ডেভোল্যাপমেন্ট
শফিকুল ইসলাম ভাই ও মার্কেটিং এর সাইদুল ইসলাম  ভাই আমাকে বলেন আপনি দ্রুত রোগি নিয়ে আসেন ব্যবস্থা হয়েছে । 

তারপর বিল পে করে কেয়ার ইউনিটে যাই- কোন ডিসকাউন্ট আছে কি না একাউন্টের দায়িত্বরত একজনকে জিজ্ঞেস করলে এমন ভাবে উত্তর দেয় যেন এটা জিজ্ঞেস করাটাও আমার একটা অপরাধ । অথচ আমার স্ত্রী ডাক্তার হিসেবে অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সেই সুবিধাটা পান ।  আমি নিজেও  বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ল্যাব টেস্টে ২০-৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পেয়ে থাকি । এর জন্য স্বাভাবিক ভাবেই তাকে প্রশ্নটা করেছিলাম। পরে আর একটা কথাও বলিনি পুরো বিল পেমেন্ট করে তাদেরকে বলি এম্বুলেন্সে তুলে দেন । উনারা বললেন রিসিপশানে যান এম্বুলেন্স বুকিং করে আসেন । গেলাম রিসিপশনে -উনারা বললো জরুরেী বিভাগে যান – গেলাম জরুরী বিভাগে – তারা বললো তাদের নিজস্ব কোন আইসিউইউ এম্বুলেন্স নেই – ওয়ালে প্রিন্ট করা দুটি নাম্বার দেখিয়ে বললেন ওখানে যোগাযোগ করুন । সাথে সাথে আমি উনাদেরকে বললাম তাহলে আগে আপনারা মিথ্যা বললেন কেন ? দেখলাম ওদের সাথে তর্ক করলে আমার ক্ষতি হবে । আমার আগে প্রয়োজন শশুড়কে বাঁচানো । ফোন দিলাম তাদের দেয়া নাম্বারে কিন্তু ওরা নরমাল এম্বুলেন্সের ড্রাইভার বললো আইসিউইউ এম্বুলেন্স ম্যানেজ করতে ঘন্টা খানেক সময় লাগবে তাদের। আমি নিরাশ হলাম। 

মোবাইলে নাম্বার খুজতে গিয়ে পেলাম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এম্বুলেন্স চালক লিটন ভাইয়ের নাম্বার আছে । উনাকে কল দিয়ে বললাম ভাই দ্রুত আমাকে একটা আইসিইউ এম্বুলেন্স পাঠান – উনি মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে আমাকে পাঠালেন।

এম্বুলেন্সে তুলতে গিয়ে এম্বুলেন্সের নার্স হারামাইনের কেয়ার ইউনিটে দায়িত্বরতদের জিজ্ঞেস করলেন কেমন অক্সিজেন লাগবে উনারা বললো ক্যানোলাতে যথেষ্ট । তাই ক্যনোলা অক্সিজেন সার্পোটে মাউন্ট এডরা নেয়ার পথে আমার শশুড়ের কন্ডিশন অনেক খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা মাউন্ট এডোরাতে পৌছায় । পৌছানোর সাথে সাথে গিয়ে দেখি মার্কেটিং এর সাইদুল ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছেন । তিনি রোগীকে সরাসরি সিসিউতে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে পাঠালেন আর নিজে কাগজ পত্র নিয়ে এডমিশন করালেন । 

এরপর মাউন্ট এডোরার কেয়ার ইউনিটে নেয়ার সাথে সাথে স্টাফ থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়, নার্স, দায়িত্বরত চিকিৎসকদের যে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে দেখলাম তা খুবই প্রশংসনীয়। আমার রোগীর কি হবে তা বড় বিষয় নয় বরং একজন রোগিকে ক্রাইসেস মোমেন্টে কেমন সেবা দিতে হয় তা দেখিয়ে দিলো তারা । 

এরপর সাথে সাথে মোবাইলে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন রেসপায়রোটোরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ শেখ এইচএম মেসবাহুল ইসলাম স্যার। তিনি সার্বিক চিকিৎসার পরামর্শ দেন , সাথে সাথে আইসিইসিউ কনসালটেন্ট সহ ইউনিটের সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন । এরপর বিখের ৪টার আগেই নিজের সকল ব্যস্ততা রেখে মেডিসিন ও কার্ডিওলজিষ্ট স্পেশালিষ্ট ও পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান  প্রফেসর ডাঃ শিশির বোসাক স্যার আমার শশুড়কে পর্যবেক্ষন করে চিকিৎসা শুরু করেন । সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো প্রত্যেকজন চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তারা সব আপডেট জানাচ্ছিলেন – এবং রাত ৮টায় আমার শশুড়ের প্রশাব স্বাভাবিক হয়। অথচ আলহারামাইনে শেষ ২ দিন প্রশ্রাব স্বাভাবিক না থাকায় উনার পুরো শরীর ফুলে গিয়েছিল । এরপর রাত ১১টায় আবার শিশির বোসাক স্যার আসেন – এবং তিনি বলেন তারা ডায়াগনেসিস করতে দিয়েছেন রিপোর্ট হাতে পেলেই পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । এদিকে পুরোটা সময় কেয়ার ইউনিটের সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের যে সহযোগিতা আমরা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি সহযোগীতা করেছেন উনারা । 

রাত ১ টার দিকে আসেন রেসপায়রোটোরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ শেখ এইচএম মেসবাহুল ইসলাম স্যার। তিনি শশুড়কে দেখে বললেন টেনশন নেই রিপোর্ট গুলো চলে আসুক – ইনশাহ আল্লাহ ভালো কিছু হবে । 
একটু স্বস্থি নিয়ে আমরা রাত পার করি । পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে সোডিয়াম ইনজেকশন পুশ করা হয় – অক্সিজেন সরবরাহ আরো বাড়ানো হয় – দুপুরের মধ্যেই আমার শশুড়ের শারীরীক অবস্থান উন্নতি হতে থাকে । আমরা আশাবাদি হই। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত সময় মতো মেসবাহুল স্যার ও শিশির বোসাক স্যার তাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দেন । পাশাপাশি ঐ ইউনিটে কর্মরত প্রাথমকি থেকে মিড ল্যাভেলের চিকিৎসক সহ সবাই সেবাটাকে সেবা হিসেবেই দিয়েছেন। 

এরপর উনার সোডিয়াম, আয়রন জনিত সমস্যা সহ শ্বাস প্রশাসের উন্নতি ঘটতে থাকে । ঐ দিন বিকেলেই প্রথম ধাপে প্রায় ৫৫০ এমএল লাংসের পানি বের করেন তারা । এরপর থেকে আরো সুস্থ হতে থাকেন তিনি । 
সকল ডায়গনেসিস রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর স্যাররা বলেন এজমা, নিউমোনিয়ার কিছুটা সমস্যা আছে তবে পানি অপসারনের পর ল্যাবে পাঠিয়ে টেস্ট করলেও ক্যান্সারের কোন সেল পাওযা যায়নি। তবে আরো কনফার্ম হওয়ার জন্য উনি পুরোপুরি সুস্থ হলে পুনরায় মাস খানেক পরে আবারো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন তারা । আপাতত আমার শশুড়কে সিসিইউ থেকে বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে আজ, তিনি অনেকটা সুস্থ হয়েছেন । সবার দোয়া চাই । 
কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো জরুরী চিকিৎসার নামে আলহারামাইন কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি করে যদি ২০ ঘন্টার মধ্যেও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে কেন এসব রোগী ভর্তি নেবে । প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়েও অতিরিক্ত বিল আদায়, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো এবং সেবার মানে চরম অবহেলা এখানে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালটির। জরুরি বিভাগেও দেখা যায় চিকিৎসা বিলম্ব ও অব্যবস্থাপনা । আল হারামাইন হাসপাতাল মূলত বাহ্যিক চাকচিক্যে রোগী আকৃষ্ট করে, কিন্তু ভিতরে রয়েছে প্রতারণা, অব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক মনোভাবের প্রকট রূপ। স্বাস্থ্য সেবার মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে। যা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকলকেই আলহারামাইনের মতো অন্যান্য হাসপাতালের দিকেও জরুরী ভাবে নজর দেয়া উচিত ।’

তবে সাংবাদিক গোলজার আহমদের আনা অভিযোগের একটি অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আল হারামাইন হাসপাতালের হেমাটোলোজিস্ট ড. আবু ইউসুফ মোঃ নাজিম। একটি খুদে বার্তার মাধ্যমে ইমজা নিউজকে জানান, তিনি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময় রোগি দেখেন। কোনো রোগির জন্য এর বাইরে পৃথক সময় বের করা কঠিন। রিপোর্ট দেখানোর জন্য কোনো টাকা আদায় করা হয় না বলেও তিনি দাবি করেন। একই ভাবে প্রত্যেক রোগির স্বজনকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান এই চিকিৎসক।