ছবি: সংগৃহিত
দেশের ১১ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ৪০ শতাংশ কিশোর ও ৪৩ শতাংশ কিশোরী পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়- এমন তথ্য এসেছে ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায়।
এতে দেখা গেছে, কিশোরদের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে, যদিও কিশোরীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সভাকক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় এই গবেষণার ফল উপস্থাপন করা হয়। শিশু ও কিশোরদের শারীরিক সক্রিয়তা নিয়ে বাংলাদেশের রিপোর্ট কার্ড তৈরির অংশ হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করে সরকারের এনসিডি কর্মসূচি, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, অ্যাকটিভ হেলথি কিডস ও অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা উপস্থাপনকালে প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিন অধ্যাপক মলয় কুমার মৃধা জানান, ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোরদের ৪০ শতাংশ এবং একই বয়সী কিশোরীদের ৪৩ শতাংশ পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়। নিষ্ক্রিয় কিশোরের হার ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি (৭১%) এবং নিষ্ক্রিয় কিশোরীর হার রাজশাহী বিভাগে (৬০%)।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে যেখানে ২৯ শতাংশ কিশোর নিষ্ক্রিয় ছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে একই সময়ে কিশোরীদের নিষ্ক্রিয়তা ৫০ শতাংশ থেকে কমে ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
গবেষণায় ২০২৩ সালের জাতীয় পুষ্টি সার্ভিলেন্সের তথ্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে দেশের ৯০টি স্থায়ী এলাকা থেকে ১১ হাজারেরও বেশি কিশোর–কিশোরীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ বছর পরিচালিত ‘ন্যাশনাল ইন্ডিকেটর সার্ভে ২০২৫’–এ দেশের আট বিভাগের ৭২৬ জন কিশোর–কিশোরীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে-
৫৮.১% কিশোর–কিশোরী আনুষ্ঠানিক খেলাধুলা বা শরীরচর্চায় অংশ নেয়।
৬৫.৭% সপ্তাহে পাঁচ দিন বা তার বেশি হাঁটা বা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়।
৪০.৯% প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোররা কিশোরীদের তুলনায় বেশি শারীরিকভাবে সক্রিয়, তবে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার হার কিশোরদের মধ্যেই বেশি।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার একটি বড় কারণ স্মার্টফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার।
গবেষণায় দেখা যায়, ৫৫.৮% কিশোর–কিশোরী দুই ঘণ্টার কম সময় স্ক্রিনে ব্যয় করে- এ ক্ষেত্রে কিশোরীদের হার বেশি।
এ ছাড়া ৪০% কিশোর–কিশোরী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ঘুমায়, যা বয়স অনুযায়ী অপর্যাপ্ত বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে-
১২% কিশোর–কিশোরী অভিভাবকের সমর্থন পান না।
৭% পান না বন্ধুদের সহায়তা।
৭৬% স্কুলে শারীরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
৬৭% টিফিনে খেলার জায়গা ব্যবহার করতে পারে।
৬৪% জানায়, তাদের প্রতিবেশী শারীরিক কর্মকাণ্ডে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যবস্থাপক নূরুল ইসলাম জানান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাচ্ছে এবং মোট মৃত্যুর ৭১% এসব রোগের কারণেই ঘটে।
অধ্যাপক মলয় কুমার মৃধা বলেন, শারীরিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো শুধু স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, যা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে ও অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এনসিডি কর্মসূচির সাবেক লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন।
