শিরোনাম
সিলেটে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কর্মবিরতি নিয়ে মুখোমুখি দুই পক্ষ নবীগঞ্জে কয়েক দিনের স.হিংসতায় নি.হত ২, লুটপাট ও ভাঙচুর, শহরে ১৪৪ ধারা জারি মঙ্গলবার থেকে সিলেটে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি নির্বাচন যত দেরি হবে, বাংলাদেশ ততই পেছাবে: সিলেটে মির্জা ফখরুল আলবদর রাজাকারবাহিনী একেক সময় একেক কথা বলছে: হাসান মাহমুদ টুকু বেগম জিয়া‌কে স্লো পয়জ‌নিং ক‌রে হ.ত্যা কর‌তেই গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছিল আওয়ামী লীগ: মির্জা আব্বাস জেলা ও মহানগর বিএনপির মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন; আশাবাদ মির্জা ফখরু‌লের বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে পৌঁছেছেন পরিবহন ধর্মঘটে ভাঙ্গন: মঙ্গলবার জামায়াতপন্থী মালিকদের গা‌ড়ি চল‌বে

https://www.emjanews.com/

6755

opinion

প্রকাশিত

০১ জুলাই ২০২৫ ১৪:৩৫

আপডেট

০১ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪৩

মতামত

বেদনার স্মৃতি

তুরাবকে হারানোর মাস

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ ১৪:৩৫

ছবি: সংগ্রহ

শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০২৪। সাধারণত জুমার দিনগুলো কিছুটা আলসেমিতে কেটে যায়। কিন্তু এই দিনটি ছিল ব্যতিক্রম। দেশজুড়ে তখন সরকার পতনের আন্দোলন। স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্র-জনতা একযোগে কঠোর আন্দোলনে নেমেছে। 
সিলেট শহর তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপে কাঁপছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অব্যাহত রেখেছিল তাদের আন্দোলন। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে মিছিল, স্লোগান আর প্রতিরোধ চলছিল।

এর আগের রাত থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল সেনাবাহিনী। ১৯ জুলাই সকালেও জাতীয় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। পুরো শহর ছিল কার্যত এক শাটডাউনের মধ্যে। দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা। জনসমাগম ঠেকাতে সবে চেষ্টাই করছিল পুলিশ।

জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরে খেতে বসেছি। ঠিক তখনই খবর এল, সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার অপু ও জয়ন্ত জানালো খবরটি। একটু পর জয়ন্ত জানালো, ছবি তুলতে গিয়ে তুরাব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

চমকে উঠলাম। কিছুক্ষণ পর তুরাবের নম্বর থেকে কল এলো।

- তুরাব, কেমন আছো? কোথায় আছো?

উল্টো প্রান্ত থেকে একজন অপরিচিত কণ্ঠ উত্তর দিলেন, ‘ভাই, আমি তুরাব ভাইকে নিয়ে ওসমানী হাসপাতালে যাচ্ছি। উনি আপনাকে আসতে বলেছেন।’

ছুটে গেলাম ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গিয়ে দেখি, তুরাবের শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ডাক্তার-নার্সরা জরুরি ব্যান্ডেজ ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। পেটের ক্ষত দিয়ে তখনও রক্ত ঝরছে। আমাকে দেখে তুরাব পানি চাইলো। ডাক্তারের অনুমতিতে ওকে পানি খাওয়ালাম, সম্ভবত সেটাই ছিল তার জীবনের শেষ পানি পান। আমাকে বলে, ‘ভাই, খুব পেরেশানি লাগছে।’

তার সহকর্মীদের ইচ্ছায় ওসমানী হাসপাতাল থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হলো। ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সে তুরাবকে তোলা হয়। ওঠার আগে আমরা একসঙ্গে ছবি তুলেছিলাম, তুরাবের জীবনের শেষ ছবি !

আমি বাসায় ফিরে এলাম মাগরিব নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ পড়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা। ঠিক তখনই ফোন এলো, হাবিব ভাই জানালেন, তুরাবের অবস্থা ভালো নয়। বের হওয়ার আগমুহূর্তে সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানালেন, তুরাব আর নেই।

বিনা দোষে, বিনা উস্কানিতে, কেবল দায়িত্ব পালনের সময় তুরাবের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। তার শরীরে লেগেছিল ১০৩টি গুলি। মাত্র দুই মাস আগে, ১৩ মে তার বিয়ে হয়েছিল।

তুরাব ছিলেন দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সিলেট ব্যুরো প্রধান। রাতেই তার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

২১ জুলাই, বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠন এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সমবেত হয়। সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি নিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। এসএমপি কমিশনার মাত্র আধা ঘণ্টার অনুমতি দিয়েছিলেন।

তবে সবচেয়ে লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক ছিল, ২৪ জুলাই ২০২৪, যখন কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি; বরং সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নেয়। পরে ১৯ আগস্ট ২০২৪, আদালতে এফআইআরভিত্তিক মামলা দায়ের করা হয়। তাতে ১৮ জন চিহ্নিত এবং ২৫০ জন অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

এর আগে, ১৬ আগস্ট, কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এটিএম তুরাবের নামে ‘তুরাব চত্বর’ নামে নামফলক টানিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। সেদিন উপস্থিত ছিলেন সিলেটের সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

তবে যে বিচার আমরা চেয়েছি, তা আজও অধরা। ২৫ সেপ্টেম্বর, এজাহারভুক্ত আসামি ওসিকে বিজিবি আটক করলেও কয়েক ঘণ্টার মাথায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এতে সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

তুরাবের শরীরের ৯৮ টি গুলির ছিদ্র দিয়ে যে রক্ত ঝরেছে, তা শুধু তার নয়, তা ছিল আমাদের ন্যায়বোধের রক্তক্ষরণ। আমরা এটিএম তুরাব হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল ব্যক্তির গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।